আহত শিশুর সাথে পুলিশের নিষ্ঠুরতা
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
রাজধানীর হাতিরঝিলে রামপুরা থানার অংশে গত মঙ্গলবার পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশও।
কিন্তু আহত শিশুর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেনি পুলিশ। বরং পরিচয় বা নাম-ঠিকানা না পেয়ে তারা শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা না করেই চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি টাকা তুলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় তাকে। এরপর শিশুটিকে স্থানীয় এক তরুণ থানায় নিয়ে গেলেও থানা পুলিশ তাকে সুরক্ষা দেয়নি। উল্টো শিশুটির এমন অবস্থার জন্য ঐ তরুণ ও তার পরিবারকে দায়ী করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তারা। শিশুটি বর্তমানে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সুলাইমান হোসেনের বাসায় রয়েছে।
তবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আহত শিশুটিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য তেজগাঁওয়ের নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে আসেন সুলাইমান। এরপর তারা শিশুটিকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের কার্যালয়ে আসেন। ওই সময় দেখা যায়, শিশুটির ডান হাত, মাথা ও পিঠে থেঁতলানো জখমের চিহ্ন রয়েছে। রক্তাক্ত ডান চোখটি ফুলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিশু শরীরের ক্ষতস্থানগুলো সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। যন্ত্রণায় কাতরালেও সে কথা বলতে পারছে না। নিজের নাম বা বাসা কোথায় কিংবা কীভাবে আহত হয়েছে, তা-ও জানাতে পারেনি সে।
অটোরিকশার চালক সুলাইমান জানান, শিশুটিকে পুলিশ না নেওয়ায় স্থানীয় লোকজন রামপুরার জমিদার গলির মসজিদে তার থাকার ব্যবস্থা করে। পরের দিন বুধবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় শিশুটিকে রাস্তার পাশে পেয়ে সুলাইমানের ছেলে আসিফসহ কয়েক তরুণ তাকে রামপুরা থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ শিশুটির এ অবস্থার জন্য আসিফকেই দায়ী করে থানায় আটকে ফেলে। কাকুতি-মিনতির পর পুলিশের গাড়িতে করে আসিফ ও আহত শিশুটিকে জমিদার গলিতে তার বাসায় নিয়ে আসা হয়।
সুলাইমান জানান, পুলিশের একজন দারোগা তাদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেছেন, তারাই শিশুটিকে মারধর করেছে। তাই তাদেরই তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করতে হবে। নইলে মামলায় পড়তে হবে। শিশুটির চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে পুলিশ চলে গেছে।
তিনি জানান, শিশুটির পরিচর্যা ও চিকিৎসার কারণে গত দুদিন তিনি অটোরিকশা চালাতে পারছেন না।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি থানায় শিশুদের জন্য আলাদা পুলিশ কর্মকর্তা ও শিশু ডেস্ক থাকার কথা। তা ছাড়া ঠিকানাহীন বা আহত শিশুদের জন্য তেজগাঁওয়ে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারও রয়েছে। এ ধরনের শিশুদের দেখভালের জন্য রয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রভিশন কর্মকর্তা ও আশ্রয়কেন্দ্র।
রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, আমি নিজে শিশুটির চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছি। অটোরিকশা চালককে শিশুটিকে রাখার অনুরোধ করে বলেছি, সুস্থ হলে শিশুটিকে তার কাছ থেকে নিয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, সমস্যা হলে শিশুটিকে থানায় পাঠিয়ে দিন।
উদ্ধারকারী ও আশ্রয়দাতা অটোরিকশা চালককে ভয়ভীতি দেখানোর কথা অস্বীকার করেন তিনি।
তবে অটোরিকশা চালক সুলাইমান বলেন, একজন দারোগা তাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, চিকিৎসার জন্য ওসি স্যার ৫০০ টাকা দিয়েছে। পরে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।’ কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি টাকা পাননি বলে জানা যায়।